মহারাষ্ট্রের চোণ্ডী (চৌরি) গ্রামে অহিল্যাবাই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই স্থান আহমেদনগর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২০২৪ সালে আহমেদনগরের নতুন নামকরণ করা হয় অহিল্যানগর।

পেশোয়া বাজী রাও মারাঠা সাম্রাজ্য বিস্তার করতে এক বিরাট সেনাবাহিনী সহ মালহার রাও হোলকারকে মালওয়া জয় করতে পাঠিয়েছিলেন।. মুঘলদের এক রাজস্ব সংগ্রহকারীর সাহায্য নিয়ে মালহার রাও বিজয়ী হলেন। পেশোয়া বাজী রাও তাঁকে সেখানকার সুবেদার নিযুক্ত করলেন।

অহিল্যাবাইয়ের জীবনে মালহার রাওয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। আট বছর বয়সী অহিল্যাবাইকে তিনিই দেখেছিলেন এবং পুত্রবধূ করে ইন্দোরে নিয়ে এসেছিলেন। রাজকীয় কাজে অহিল্যাবাইকে তিনি তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে নিয়োগ করলেন, যদিও অহিল্যাবাই কোনদিন সুবেদার ছিলেন না। তিনি তাঁকে রাজনীতি ও সততার শিক্ষা দিলেন, তাঁর অন্যান্য পুত্রদের সঙ্গে অশ্বারোহণ ও তীরন্দাজী শেখালেন। তিনি নিজে জন্মেছিলেন এক মেষপালক পরিবারে; সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধে পরাক্রমী হয়ে তিনি নাম করেছিলেন।

পেশোয়ার কাজে মালহার রাও সারাক্ষণ নানা যুদ্ধে ব্যস্ত থাকতেন। ইন্দোর রাজ্যের দৈনিক প্রশাসনের দায়িত্ব থাকত অহিল্যাবাইয়ের ওপর। অহিল্যাবাইয়ের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মক্ষমতার উপর তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা ছিল। তিনি রাজ্যের বাইরে থাকলেও সবসময় যোগাযোগ রাখতেন অহিল্যাবাইয়ের সঙ্গে। তিনি নির্দেশ পাঠাতেন কত সৈন্য, টাকাকড়ি বা রসদ যোগান দিতে হবে যুদ্ধক্ষেত্রে, এবং অহিল্যাবাই সেই নির্দেশ পালন করতেন। মালহার রাও নির্দেশ পাঠাতেন কত কামান আর গোলাবারুদ তৈরি করতে হবে, কিভাবে রাজ্য শাসন করতে হবে।

স্বামী ও পুত্রের মৃত্যুর পর অহিল্যাবাই আধ্যাত্মিকতার দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন, কিন্তু রাজমাতা হিসেবে তাঁর কর্তব্য. সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণভাবে সচেতন ছিলেন। নর্মদা নদীতীরে শান্তির সন্ধান পেয়ে ১৭৬৭ সালে মহেশ্বরে নতুন রাজধানী স্থাপন করলেন তিনি। জীবনের ২৮ বছর সেখানে কাটিয়েছেন তিনি। তাঁর শ্বশুরমশাই ১৭৪৫ সালে প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছিলেন যে ভবিষ্যত মহেশ্বরনিবাসীদের সুরক্ষিত রাখার হবে, সেনানী, ছুতোর মিস্ত্রী, তাঁতী ও শ্রমিকদের বাসস্থান তৈরির জন্য জমি দেওয়া হবে। মহেশ্বরে ষাটটির বেশি মন্দির আছে। প্রাচীন ভারতে মহেশ্বরের নাম ছিল মাহিষ্মতী।

ইন্দোর বিমানবন্দরের নাম অহিল্যাবাইয়ের নামে। হোলকার বংশ ইন্দোর থেকে রাজ্য শাসন করত। শ্বশুরমশাইয়ের মৃত্যুর পর অহিল্যাবাই রাজধানী ইন্দোর থেকে মহেশ্বরে নিয়ে যান।

ভোপাল বিমানবন্দর কিংবদন্তিসম রাজা ভোজের নামে এবং গোয়ালিয়র বিমানবন্দর রাজমাতা বিজয়রাজে সিন্ধিয়ার নামে। উজ্জয়িনীতে এখনো কোনো বিমানবন্দর তৈরি হয় নি।

লোকমাতা (জনগণের মাতা) এবং পুণ্যশ্লোকা (শ্লোকের ন্যায় পুণ্যবতী) নামে খ্যাত হলেও অহিল্যাবাইয়ের সাংসারিক জীবন খুব দুঃখের ছিল। তাঁর পরিবারের সদস্যরা সকলেই তাঁর আগে পরলোকগমন করেন। অল্প বয়সে স্বামী খাণ্ডে রাওকে হারান। ১৭৬১ সালে পানিপথের যুদ্ধের কিছুকাল পরে তাঁর শ্বশুরমশাই ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর একমাত্র পুত্র অপুত্রক অবস্থায় অল্পবয়সেই মারা যান। তাঁর জামাই হঠাৎ করেই মারা যান। যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়ে তাঁর দৌহিত্রর (নাতির) মৃত্যু হয়। পরিবারের মৃত পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের স্ত্রীরা সতী হয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেন। অহিল্যাবাইয়ের মেয়ে যখন সতী হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন, সেটা তাঁর জীবনের সর্বশেষ আঘাত। তাঁর মৃত্যুর পর বেঁচে ছিলেন শুধু তাঁর পালিত পুত্র তুকোজি আর তার পুত্রবর্গ।তুকোজি ছিলেন মালহার রাওয়ের ভ্রাতুষ্পুত্র; (ভিন্ন মতে তুকোজি ছিলেন রাজপুরীর কোনো দাসীর গর্ভজাত মালহার রাওয়ের পুত্র)। তুকোজি মালহার রাওয়ের এক বিশ্বস্ত সেনাপতি। ১৭৯৫ সালে অহিল্যাবাইয়ের মৃত্যুর পর তিনি হোলকার বংশের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিলেন, যা এখনও চলছে।

অহিল্যাবাই সারা ভারতের দক্ষ তাঁতীদের মহেশ্বরে এসে বসবাস করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ব্যবসা শুরু করতে তিনি তাদের আর্থিক সহায়তা করেছিলেন, এবং তাদের তৈরি শাড়ি ও কাপড় তিনি কিনতেন। রেশমশিল্প বিশেষজ্ঞ সংখ্যারাম ডোঙরেকে তিনি ইন্দোরে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন। চার বছরের মধ্যেই একশোর বেশি তাঁতশিল্পী মহেশ্বরী শাড়ি বোনা শুরু করলেন। অহিল্যাবাইয়ের অনুপ্রেরণায় মহেশ্বরে ভালো মানের শাড়ি ও জামাকাপড় তৈরি করা শুরু হল।
মহেশ্বর বাসন তৈরির জন্যও বিখ্যাত ছিল এবং খুব শীঘ্রই মহেশ্বরী রূপার বাসন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে। তাঁর প্রজারা যাতে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে সেদিকে অহিল্যাবাইয়ের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। অ্যানি বেসান্ত লিখেছেন, “তিনি তাঁর প্রজাবর্গের সুখ-সমৃদ্ধি দেখতে ভালোবাসতেন, ভালোবাসতেন সুন্দর শহর গড়ে ওঠা দেখতে, এবং সর্বোপরি দেখতে যে তাঁর প্রজারা তাদের ধনসম্পদ প্রদর্শন করতে ভয় পাবে না, তাদের মনে হবে না যে তাদের প্রভু তাদের ধনসম্পত্তি তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেবেন”।

ঔরঙ্গজেব যে মন্দির ধ্বংস করেছিলেন তার অনতিদূরে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির নতুনভাবে নির্মাণ করে অহিল্যাবাই বিখ্যাত হয়েছিলেন। ১৭৮৫ সালে ৫১ ফুট উঁচু এই মন্দির নির্মিত হয়েছে। বারাণসীতে তাঁর অনেক অবদান আছে। তিনি মণিকর্ণিকা ঘাট নির্মাণ করেন, এবং শুধু মহিলাদের ব্যবহারের জন্য একটি ঘাট নির্মাণ করেন মণিকর্ণিকায়। তারকেশ্বর মন্দির ছাড়াও ছয়টি বেসরকারী মন্দির এবং নয়টি বেসরকারী বাঙলো তিনি তৈরি করেন। ব্রাহ্মণদের বসবাসের জন্য তিনি ব্রহ্মপুরী তৈরী করেন।

গজনীর মাহমুদ সোমনাথ মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। সেই স্থল থেকে একটু দূরে তিনি নতুন সোমনাথ মন্দির স্থাপন করেন। পরে পুরোনো জায়গাতে সোমনাথ মন্দির আবার নতুনভাবে সৃষ্টি করা হয় আজ থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগে। কিন্তু অহিল্যাবাইয়ের সৃষ্ট মন্দিরে এখনও পূজা হয়, এবং তীর্থযাত্রীদের ভিড় লেগেই থাকে।

অহিল্যাবাই প্রায় সমস্ত হিন্দু তীর্থস্থানগুলির সংস্কারের জন্য অর্থ যোগান দিয়েছিলেন – ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গ, চারধাম, পঞ্চকেদার ও সপ্ত পুরী।

খাণ্ডেরাওয়ের মৃত্যুর পর অহিল্যাবাই সতী হবেন স্থির করেন। মালহার রাও তাঁকে বোঝান সতী না হতে। কোনো পুরুষ উত্তরাধিকারী নেই, অহিল্যাবাই ছাড়া রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব কে নেবে, এবং মালহার রাও চিরকাল রাজ্যের ভবিষ্যত অহিল্যাবাইয়ের হাতেই ভেবে এসেছেন। অহিল্যাবাই তাঁর কথা মান্য করে সতী হলেন না, কিন্তু সারাজীবনের জন্য নিরাভরণ ও শ্বেতবসনা হয়ে রইলেন।
অহিল্যাবাই সতীদাহ প্রথার বিরোধী ছিলেন, কিন্তু তখনকার সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে সক্ষম হননি। তিনি শুধু এইটুকু নিশ্চিত করলেন যে স্ব ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো নারীকে যেন সতী হতে না হয়। তিনি বিধবাদের অধিকারসমূহ সুরক্ষিত করলেন, মৃত স্বামীর সম্পত্তির অধিকার দিলেন যাতে সতী না হওয়া বিধবাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত থাকে। তিনি অনুমতি দিলেন বিধবারা পুত্র দত্তক নিতে পারবেন, তার জন্য সরকারের অনুমতি লাগবে না, বা কোনো কর দিতে হবে না। এই পদক্ষেপ নেওয়ার পর সতীদাহর ঘটনা অনেক কমে যায়। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর কন্যা, পুত্রবধূ ও দৌহিত্রের পত্নী সকলেই সতীদাহ বেছে নিয়েছিলেন।

মালহার রাও একবার জয়পুরে ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া মিটমাট করে ধন্যবাদ স্বরূপে রামপুর অঞ্চল উপহার পেয়েছিলেন। রামপুরের চন্দ্রাবতরা সেটা ভালোভাবে নিতে পারে নি। মালহার রাওয়ের মৃত্যুর পর ১৭৭১ সালে তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। অহিল্যাবাই নিজে যুদ্ধযাত্রা করে বিদ্রোহ দমন করেন। ১৭৮৩ সালে আবার তারা বিদ্রোহ করে এবং আবার হেরে যায়। হোলকার বংশের দুর্বলতা আন্দাজ করে চন্দ্রাবতরা মারাঠাদের আবার আক্রমণ করে এবং সেখানকার মারাঠা অধ্যক্ষ পলায়ন করে। তুকোজীরাও তখন দক্ষিণে ব্যস্ত ছিলেন। ক্ষিপ্ত অহিল্যাবাই শরীফ ভাইকে অনুরোধ করলেন চন্দ্রাবতদের বিরুদ্ধে তাঁর সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিতে। তিনি নিজেই যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে রসদের যোগান এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। চন্দ্রাবতদের মারাঠারা সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত করল। অহিল্যাবাইয়ের আদেশে চন্দ্রাবতদের বিদ্রোহী নেতা সৌভাগ সিং কে কামানে বেঁধে গোলা ছুঁড়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পেশোয়া এবং নানা ফড়নবিশ যুদ্ধে অহিল্যাবাইয়ের শৌর্যকে স্বীকৃতি দিলেন। এর আগে অহিল্যাবাই বিখ্যাত ছিলেন তাঁর ধার্মিক চরিত্র এবং শাসনব্যবস্থার জন্য। রাজপুত বিদ্রোহ দমনের পর তিনি বীরাঙ্গনা রূপেও পরিচিত হলেন।

শাসনব্যবস্থার সর্বদিকেই অহিল্যাবাই দক্ষ ছিলেন। তিনি তাঁর নিজস্ব তহবিল আর রাজ্যের তহবিল আলাদা করে রেখেছিলেন। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে তিনি দক্ষ ছিলেন। পেশোয়ার তহবিলে তিনি ঠিক সময় জমা দিতেন তাঁর প্রাপ্য রাজস্বের অংশ এবং যুদ্ধজয়ের শেষে লুণ্ঠনের অংশ। তাঁর পরিচালিত বিচারব্যবস্থা ছিল দ্রুত, পক্ষপাতহীন, এবং মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তৈরি। অত্যন্ত কার্যকর এই বিচারব্যবস্থা আধুনিক পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মত সব সমস্যার দ্রুত সমাধান করত। তাঁর দান কার্য বিখ্যাত ছিল এবং সকল তীর্থস্থানে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। এই সকল দান ধ্যান তাঁর নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হত, জনসাধারণের তহবিল থেকে নয়।

এক স্কটিশ মহিলা কবি, জোনা বেইলি, লিখেছেন
“For thirty years her reign of peace, The land in blessing did increase;
And she was blessed by every tongue, By stern and gentle, old and young.
Yea, even the children at their mothers feet, are taught such homely rhyming to repeat.
In latter days from Brahma came, To rule our land, a noble Dame,
Kind was her heart, and bright her frame, And Ahilya was her honoured name.”

উনিশ শতকের প্রথম দিকে বম্বের গভর্নর, সার জন ম্যালকম, মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর ভাষায় “অহিল্যাবাইয়ের অসামান্য কর্মক্ষমতা তাঁকে তাঁর প্রজাদের কাছে ও মারাঠা জোটবদ্ধ নেতৃত্বের কাছে শ্রদ্ধার পাত্রী করে তুলেছিল। মালোয়াবাসীদের কাছে তাঁর নাম পবিত্র…তিনি ঐশ্বরিক দেবীর সমান। সবচেয়ে সংযত মত নিলে বলা যায়, তাঁর সীমিত পরিসরে সকল শাসকদের মধ্যে তিনি ছিলেন চিরকালের খাঁটি ও আদর্শ রাজ্য শাসকদের একজন।“

মারাঠাগণ এবং অহিল্যাবাই সর্বক্ষেত্রে হিন্দু পুনরুজ্জীবন সমর্থন করতেন, তীর্থস্থানের সংস্কার অহিল্যাবাইয়ের শ্রেষ্ঠ কাজ রূপে ধরা হয়। বিগত সাত শতাব্দীর বিদেশি আক্রমণে ভারতের অনেক তীর্থস্থান ধ্বংস হয়ে যায়। হিন্দু সমাজ ও হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলিকে মারাঠারাই পুনর্গঠন করেন।

অহিল্যাবাই এই কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে সম্পূর্ণ করেন। তাঁর দাতব্য কাজ দিয়ে তিনি মন্দির পুনর্গঠন, তীর্থস্থানে নদীর ঘাট তৈরি করা, তীর্থযাত্রীদের বসবাসের জন্য ধর্মশালা এবং জলের ব্যবস্থা করেছিলেন।

মালহার রাওয়ের জীবদ্দশায় অহিল্যাবাই অনেক তীর্থস্থানে গিয়েছিলেন, বুঝেছিলেন তীর্থযাত্রীদের অনেক দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়, অনেক খরচ করতে হয়। তিনি স্থির করলেন তাঁর নিজস্ব সম্পত্তি ব্যয় করে তীর্থস্থানগুলিতে তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে নানা ব্যবস্থার সংস্কার করবেন। মন্দির, স্নানের ঘাট ও ধর্মশালা নির্মাণ করেছেন। ভারতের প্রায় প্রতিটি মুখ্য তীর্থস্থানে তিনি তাঁর উদারতা ও দানের পরিচয় দিয়েছেন। কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, রামেশ্বরম, পণ্ঢরপুর, সোমনাথ, পুরী – ভারতের সব কোণে তাঁর কাজের পরিচয় পাওয়া যায়। এইগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিনি স্থায়ী তহবিলে অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন।
তাঁর দাতব্য কাজ সম্বন্ধে জন ম্যালকম বলেছেন, “রাষ্ট্রের কার্যাবলী থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সব ঘণ্টাই ব্যয় হয়েছে ভক্তিমূলক ও দাতব্য কাজে। এক গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস তাঁর জাগতিক কাজের প্রেরণা যুগিয়েছে।“
স্বাধীনতার পর একটি ট্রাস্ট তৈরি করা হয় অহিল্যাবাইয়ের ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যয় করে তৈরি হওয়া সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করার জন্য। ২০১২ সালে প্রাক্তন লোকসভা স্পিকার ও ইন্দোর থেকে নির্বাচিত সাংসদ সুমিত্রা মহাজন একটি অভিযোগ দায়ের করেন যাতে এই ট্রাস্ট ওই সম্পত্তির কোন অপব্যবহার এবং অননুমোদিত বিক্রি করতে না পারে। এর ফলে মধ্যপ্রদেশ সরকার ও পরে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট যথাযথ ব্যবস্থা নেয় যাতে এই সম্পত্তি কোনভাবেই অনুমতি ছাড়া বিক্রি করা না হয়।

আটটি জ্যোতির্লিঙ্গ তীর্থে অহিল্যাবাইয়ের অবদানের স্বীকৃতি লিখিত আছে। আরো চারটিতে হোলকার বংশের দাতব্য কর্মের স্বীকৃতি দেখা যায়, কিন্তু কে করেছেন জানা যায় নি। অহিল্যাবাইয়ের সবচেয়ে পরিচিত চিত্রে দেখা যায় তিনি শিবলিঙ্গ হাতে তুলে নিয়েছেন। সাতটি পুরীতে(মোক্ষ শহর)- অযোধ্যা, মথুরা, দ্বারকা, হরিদ্বার, বেনারস, কাঞ্চি ও উজ্জয়িনী, এবং চার ধামে – পুরী , দ্বারকা, রামেশ্বরম ও বদ্রীনাথ, তিনি তাঁর অবদান রেখেছেন। প্রতি বছর শিবরাত্রির দিনে গঙ্গোত্রী থেকে পবিত্র গঙ্গাজল চল্লিশটি মন্দিরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন অহিল্যাবাই। তার মধ্যে আছে জ্যোতির্লিঙ্গ, পশুপতিনাথ, গোকর্ণ এবং পণ্ঢরপুর। এই রীতি এখনো বজায় আছে এবং অহিল্যাবাই যে ব্রাহ্মণদের এই কাজে নিযুক্ত করেছিলেন তাদের বংশধররা এই কাজ এখনো করছেন।