প্রথম কাণ্ড বালকাণ্ডে তুলসীদাস বলেছেন,
“साधु चरित सुभ चरित कपासू। निरस बिसद गुनमय फल जासू॥ जो सहि दुख परछिद्र दुरावा। बंदनीय जेहिं जग जस पावा॥” অর্থাৎ
“সাধু লোকেদের প্রকৃতি খাঁটি তুলোগাছের অনুরূপ – যার ফল সুস্বাদু না হলেও তা অপরিসীম ও নিঃস্বার্থ উপকার বিতরণ করে। সাধুগণও তুলোর স্বরূপ; তাদের কর্ম নির্মল এবং ধার্মিকতায় পরিপূর্ণ। তুলো যেমন মানবজাতির আরামদায়ক পরিধান নির্মাণের জন্য নিজে চরকার আবর্তন এবং বুনন সহ্য করে, ঠিক তেমনই মুনিঋষিগণ অন্যদের উপকার ও উদ্ধারের জন্যে নানাবিধ কৃচ্ছসাধন করে থাকেন।”

মানস বাল্মীকি রামায়ণের উপর ভিত্তি করে তৈরি তবে দৈর্ঘ্যে (১২০০০ লাইন) অনেক ছোট। এটিতে সাতটি কাণ্ড রয়েছে, সাতটি পদক্ষেপ, যা রামকথার পবিত্র হ্রদের দিকে পাঠককে পরিচালিত করে। ধার্মিক হৃদয়ের বন্দনা দিয়ে এর শুরু । মানস সর্বদা উল্লেখ করে যে প্রবীণ এবং সাধুদের আশীর্বাদ জীবনে অতিশয় আবশ্যক।

তুলসী বলেন,
“पर अकाजु लगि तनु परिहरहीं। जिमि हिम उपल कृषी दलि गरहीं॥
बंदउँ खल जस सेष सरोषा। सहस बदन बरनइ पर दोषा॥” অর্থাৎ
“শিলাবৃষ্টি যেমন শস‍্যক্ষেত্র ধ্বংস করার পর নিজেকে বিলীন করে তেমনি অনেক মানুষ অন্যের ক্ষতি করার জন্য তাদের নিজের জীবন ত্যাগ করে। আমি এ জাতীয় দুষ্ট আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই ও সহস্রমুখী শেষনাগের সাথে তাদের তুলনা করি, কারণ তারা যেভাবে অবিরত অন্যের ত্রুটিগুলি উল্লেখ করে তাতে মনে হয় তারা হাজারটা মুখে বিষ উদগীরণ করছে।”

কবীরও বলেন “निंदक नियेरे राखिये, आंगन कुटी छावायें बिन पानी साबुन बिना, निर्मल करे सुहाए” অর্থাৎ, “সমালোচকদের নিজের নিকটে রাখুন, তারা আপনাকে জল বা সাবান ছাড়াই ধৌত করে।”
তুলসীদাস তাঁর মহাকাব্যটি সংস্কৃতের পরিবর্তে প্রচলিত ভাষা আওধিতে রচনা করেছিলেন। কথিত আছে যে এই কারণে তিনি কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন । তাঁকে অযোধ্যা ছেড়ে কাশী চলে যেতে হয়েছিল। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে, তাঁকে জব্দ করার জন্য, মানসকে একবার সংস্কৃত বইয়ের স্তূপের নীচে রাখা হয়েছিল। সকালে মন্দিরটি খোলার সময় মানসটি শিবের স্বাক্ষর সহ স্তূপের শীর্ষে পাওয়া যায়। তুলসীদাসের আওধি মহাকাব্যকে যে তাঁর সমালোচকরা সহজে গ্রহণ করেননি কাহিনীটি সম্ভবত তার রূপক।

মানস হিন্দু ঐতিহ্যের উপাসনায় নির্গুণ (গুণাবলীর অতীত ঈশ্বর) এবং সগুণ (রূপ এবং গুণসম্পন্ন ঈশ্বর) দ্বন্দ্বের মধ্যে সুন্দরভাবে সমন্বয় আনে। এটি কোন জটিল রূপক যুক্তি ব্যবহার করে না। এটি সহজভাবে বলে যে নিষ্ক্রিয়, নিত্য, এবং নিরবয়ব ব্রহ্ম ভক্তদের উপাসনায় সর্বরূপ ও সর্বরসের ঈশ্বর (সগুণ) হয়ে ওঠেন। বালকাণ্ডে শিব-পার্বতী সংলাপ বলে,
“सगुनहि अगुनहि नहिं कछु भेदा। गावहिं मुनि पुरान बुध बेदा॥ अगुन अरूप अलख अज जोई। भगत प्रेम बस सगुन सो होई॥” অর্থাৎ
“অব্যক্ত (অব্যয় ও অরূপ) ঈশ্বর এবং ব্যক্ত (বিশেষরূপী) ঈশ্বরের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। সন্তগণ, পুরাণ, সম্মানিত পণ্ডিত এবং বেদ সকলেই এই সত্য স্বীকার করে। সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান (ব্রহ্ম) ঈশ্বর জাগতিক বৈশিষ্ট্যগুলির ঊর্ধ্বে; তিনি নিরাকার, মন এবং ইন্দ্রিয়ের নাগালের বাইরে, এবং অজন্মা। তবুও, তাঁর ভক্তদের অসীম ভালবাসায় অভিভূত, তিনি আনন্দরূপে অমৃতরূপে প্রকাশ পান।”

বেদান্ত দর্শনটি দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহারিক উদাহরণের মাধ্যমে শেখানো হয়। অন্যথা, এর নিগূঢ় সত্য সহজে অনুধাবন করা যায় না। বেদান্তের সারমর্ম হল ব্রহ্মই একমাত্র সত্য এবং জীব ব্রহ্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশাল মহাসাগরে অগণিত তরঙ্গের উত্থান পতন হয়ে চলেছে। প্রতিটি তরঙ্গ একে অপরের থেকে পৃথক এবং প্রত্যেকটিকে পৃথকভাবে উপলব্ধি করা যায়। তবে বস্তুত সমস্তই জল, এবং মহাসাগর থেকে কেউই পৃথক নয়। বাস্তবে সব একই। তুলসী বালকাণ্ডে লিখেছেন,
“गिरा अरथ जल बीचि सम कहिअत भिन्न न भिन्न। बंदउँ सीता राम पद जिन्हहि परम प्रिय खिन्न॥“ অর্থাৎ
“ঠিক যেমন কথাসমূহ এবং তাদের অর্থ, বা জল এবং তার ঢেউগুলি স্বতন্ত্রভাবে দেখা যায় কিন্তু প্রকৃত রূপে তারা অভিন্ন, তেমনি রাম এবং সীতাও অভিন্ন; যদিও তাঁদের পৃথক মনে হয়, তারা মূলত এক। বিনয়ী ও দয়াবান মানুষ তাঁদের সবচেয়ে প্রিয়; আমি তাঁদের চরণকমলে মাথা নত করি।”

তুলসী দাবি করেছেন যে তাঁর রচনা মহাদেব দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং তাঁর পাঠকদের এটিকে আরও পরিমার্জিত করার জন্য বিনীত অনুরোধ করেছেন। এমন অনেক শ্লোক রয়েছে যেখানে রাম এবং শিব একে অপরের প্রশংসা-গীত গাইছেন। তুলসীদাস এই ধারণাটি সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করছিলেন যে ঈশ্বর এক। তিনি শৈব এবং বৈষ্ণবদের মধ্যে তাত্ত্বিক সংঘাতগুলি অবসান করার প্রয়াস করেছিলেন। তুলসী সচেতন ছিলেন যে কাশ্মীরি শৈবধর্মের মতো প্রভাবশালী দর্শনগুলিতে শিব হলেন নির্গুণ (গুণাতীত) ঈশ্বর। নির্গুণ চেতনার সর্বশ্রেষ্ঠ অধিবক্তা শঙ্করাচার্য্যও শিবের অনুগত ছিলেন।
তুলসী লিখেছেন, “संभु प्रसाद सुमति हियँ हुलसी। रामचरितमानस कबि तुलसी॥ करइ मनोहर मति अनुहारी। सुजन सुचित सुनि लेहु सुधारी॥ অর্থাৎ,
“ভগবান শম্ভুর অনুগ্রহে, তুলসীদাসের হৃদয়ে এক অতি মনোরম ও ঐশিক প্রজ্ঞা উদয় হয় যা তাঁকে শ্রীরামচরিতমানস রচনা করতে অনুপ্রাণিত করে। কবি তুলসীদাস তাঁর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কাব্য রচনা করে পাঠকের হৃদয়ে আনন্দ বিস্তার করার চেষ্টা করেন এবং তিনি প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের অনুরোধ করেন তাঁদের শুদ্ধ এবং বিচক্ষণ মন দিয়ে এটি শোনার জন্য এবং প্রয়োজনে এটি আরও পরিমার্জিত করার জন্য।”

পুরাণের আখ্যানমতে সতীর পিতা ছিলেন দক্ষ। সমৃদ্ধ, বিত্তশালী দক্ষ তাঁর কন্যা সতীর সঙ্গে শিবের মতো কপর্দকহীন তপস্বীর বিবাহে ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন। পরে দক্ষ এক যজ্ঞের আয়োজন করেন। সতী ও শিবকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তিনি শিবকে যজ্ঞে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করেন নি। কিন্তু শিবের উপদেশ উপেক্ষা করে সতী যজ্ঞে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সতী যখন যজ্ঞস্থলে পৌঁছলেন, দক্ষ আবার শিবকে অসম্মান করেন। অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী যজ্ঞের আগুনে প্রবেশ করে প্রাণত্যাগ করেন। এতে শিব ক্রুদ্ধ হয়ে দক্ষের যজ্ঞ ধ্বংস করেন এবং সতীর অর্ধদগ্ধ মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে মহাবিশ্ব জুড়ে প্রলয়নাচন নাচেন।
তুলসী হিন্দু লোককাহিনী সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাঁর রচনায় এই কাহিনীগুলি সম্মিলিত করেছিলেন। এই গল্পটি দিয়ে, তিনি সতর্ক করেছেন যে, ক্ষমতা মানুষকে উদ্ধত করে। তিনি লিখেছেন,
“बड़ अधिकार दच्छ जब पावा। अति अभिमानु हृदयँ तब आवा॥ नहिं कोउ अस जनमा जग माहीं। प्रभुता पाइ जाहि मद नाहीं॥” অর্থাৎ
“যখন দক্ষ প্রবল প্রতাপ ও পরাক্রমশালী হয়ে উঠলেন, তখন তাঁর হৃদয় মিথ্যা অহংকারে ভরে উঠল। ক্ষমতার অহংকারে উন্মত্ত হয় না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই আছেন।”

তুলসী লিখেছেন,
“जिन्ह कें रही भावना जैसी। प्रभु मूरति तिन्ह देखी तैसी॥” অর্থাৎ,
“প্রত্যেক মানুষ প্রভু রামকে সেই রূপেই দেখেন যে রূপ তাঁরা তাঁদের হৃদয়ে সস্নেহে লালন করেন।”
রাম যখন সীতার স্বয়ম্বরসভায় জনকের প্রাসাদে প্রবেশ করেন সেই পরিপ্রেক্ষিতে এটি লেখা হয়। তুলসীদাস এই কথা দিয়ে হিন্দুধর্মের একাধিক দেবতার আরাধনার প্রসঙ্গকে তুলে ধরেছেন। যে কেউই তার আপন আবেগ ও প্রয়োজন অনুসারে ঈশ্বরকে কল্পনা করতে পারে। হিন্দু ধর্মকে কখনও কখনও বহু-ঈশ্বরবাদ বলা হয় – অনেক দেবতার উপাসনা। প্রকৃতপক্ষে এটি ভক্তদের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে বিভিন্ন রূপে ঈশ্বরের উপাসনার উৎসাহ দেয়।

অযোধ্যা কাণ্ডে নিষাদরাজ শোক প্রকাশ করেছিলেন যে রাম নির্বাসিত হয়েছেন এবং তজ্জন্যে প্রবল দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়েছেন। লক্ষ্মণ শান্তভাবে উত্তর দেন,
“सपनें होइ भिखारि नृपु रंकु नाकपति होइ। जागें लाभु न हानि कछु तिमि प्रपंच जियँ जोइ॥”
অর্থাৎ,
“স্বপ্নে একজন রাজা ভিক্ষুক হয়ে উঠতে পারেন, এবং একজন কপর্দকশূন্য ব্যক্তি আকাশকে শাসন করতে পারে; কিন্তু ঘুম থেকে জেগে ওঠার পরে ক্ষতি বা লাভ কিছুই অবশিষ্ট থাকে না; একই ভাবে এই বৈষয়িক জগত হৃদয়ে মায়া সৃষ্টি করে, একে অবাস্তব হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।”
উপনিষদগুলিও জাগ্রত, স্বপ্নাভিভূত এবং গাঢ় নিদ্রায় অবচেতন অবস্থাগুলির উপমা ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করে যে বৈষয়িক জগত এক মায়ামাত্র (সাময়িক)।

বর্তমান ও পূর্ববর্তী জন্মে আমাদের ক্রিয়াকলাপের পরিণতি হল আমাদের জীবন – এই তত্ত্বটি হিন্দু নীতিশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। অযোধ্যা কাণ্ডে রাজা দশরথ যখন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রীরামচন্দ্রের নির্বাসন নিয়ে বিলাপ করছিলেন, তখন তাঁর উপদেষ্টা সুমন্ত্র সান্ত্বনা দিয়েছেন,
“जनम मरन सब दुख सुख भोगा। हानि लाभु प्रिय मिलन बियोगा॥
काल करम बस होहिं गोसाईं। बरबस राति दिवस की नाईं॥” অর্থাৎ
“জন্ম-মৃত্যু, আনন্দ-বেদনা, লাভ-ক্ষতি, প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলন ও তাদের থেকে বিচ্ছেদ, এই সমস্ত, হে প্রভু, কেবল কাল এবং কর্ম দ্বারা পরিচালিত হয়। তারা অনিবার্যভাবে স্থানান্তরিত হয়, ঠিক যেমন দিন গড়িয়ে রাত ও রাত শেষ হয়ে দিনে পরিণত হয়।”

“मैं अरु मोर तोर तैं माया” অর্থাৎ “আমি এবং আমার, তুমি এবং তোমার, সকলই মায়া” এই বাক্যটি তার সংক্ষিপ্ত পরিসরে ভাবপ্রকাশে উজ্জ্বল। এটি আমাদের উপনিষদের মহাবাক্যগুলি স্মরণ করিয়ে দেয়।
অরণ্যকাণ্ডে, বনের গভীরে প্রবাসকালে, রামচন্দ্র অবসর যাপনের সময় লক্ষ্মণকে হিন্দু ঐতিহ্যের কিছু মূল তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছিলেন – যথা মায়া, জ্ঞান, জীব, ঈশ্বর, ভক্তি। তিনি বলেছেন,
“थोरेहि महँ सब कहउँ बुझाई। सुनहु तात मति मन चित लाई॥ मैं अरु मोर तोर तैं माया। जेहिं बस कीन्हे जीव निकाया॥” অর্থাৎ,
“আমি তোমাকে সংক্ষিপ্তভাবে সব কিছু ব্যাখ্যা করব। প্রিয় ভ্রাতা, তোমার হৃদয় এবং মনকে একনিষ্ট করে, মনোযোগ দিয়ে শোন। “আমি” এবং “আমার,” “তুমি” এবং “তোমার” অনুভূতি সমস্তই মায়া (মায়াময় শক্তি), যা সকল জীবকে আচ্ছন্ন করে রাখে।”

উত্তরকাণ্ডে তুলসী রামরাজ্যের গুণাবলী বর্ণনা করেন – সেখানে জরার ভয় নেই, দুর্বলের উপর সবলের উৎপীড়ন নেই, শুধু আছে অবিরোধ সম্প্রীতি; রামরাজ্যে মানুষজন আত্মবিজয়কেই প্রাধান্য দেয়। সেথায় পুণ্য বিরাজ করে এবং প্রকৃতি অকৃপণ দানে প্রাচুর্যে ভরিয়ে রাখে। গান্ধীজি এই বর্ণনাকে ভিত্তি করে তাঁর সুশাসনের ধারণাগুলি তৈরি করেছিলেন। কথিত আছে যে তিনি তাঁর জীবনে কেবল একটি ছায়াছবি দেখেছিলেন, বিজয় ভট্ট পরিচালিত ‘রাম রাজ্য’ ।

ভারতীয় ঐতিহ্যে আত্মবিজয়কে সর্বাপেক্ষা মহিমান্বিত সাধন হিসাবে ধরা হত। জৈনরা তাদের সর্বাধিক খ্যাত তীর্থঙ্করকে (শিক্ষক) মহাবীর (মহান যোদ্ধা) উপাধিতে ভূষিত করেছিল – তিনি ছিলেন আত্মজয়ের প্রতীক।

তুলসী লিখেছেন,
“दंड जतिन्ह कर भेद जहँ नर्तक नृत्य समाज। जीतहु मनहि सुनिअ अस रामचंद्र कें राज॥” অর্থাৎ
“শ্রীরামচন্দ্রের রাজ্যে শাস্তিদানের জন্য কারো হাতে দণ্ড থাকত না। কেবলমাত্র তপস্বীগণ ধর্মীয় প্রতীক হিসাবে দণ্ড বহন করতেন।” প্রজাদের মধ্যে পারস্পরিক সদ্ভাব ও সম্প্রীতি ছিল। বিভিন্ন ধরণের বাদ্য এবং নৃত্য পরিবেশনার মধ্যেও যেমন একটি সমন্বয় থাকে, বিভিন্ন সুরে লয়ে ছন্দে বাঁধা রামরাজ্যের মানুষজন একটি অলক্ষ্য গ্রন্থিতে গাঁথা ছিল। রামের রাজ্যে “অন্যের উপর জয়” বাক্যাংশটি কেবল নিজের ইন্দ্রিয়কে জয় করার প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছিল।

আশ্চর্যজনক ভাবে তুলসী দুষ্টজনের সঙ্গে ময়ূরের তুলনা করেছেন। তিনি উত্তরকাণ্ডে লিখেছেন,
“झूठइ लेना झूठइ देना। झूठइ भोजन झूठ चबेना। बोलहिं मधुर बचन जिमि मोरा। खाइ महा अहि हृदय कठोरा॥” অর্থাৎ
“তারা তাদের সমস্ত লেনদেনে মিথ্যা অবলম্বন করে – বাড়িতে, ব্যবসায়, এমনকি ভোজনের সময়ও। মধুর মতো মিষ্ট তাদের বচন অনেকটা ময়ূরের মতো, যার সৌন্দর্য ঢেকে রাখে তার নির্মম হৃদয়, যার বলে সে বিষধর সর্পকে গ্রাস করতে পারে।”

কার্তিকের বাহন ময়ূর সৌন্দর্য এবং রাজকীয়তার প্রতীক। তার পেখমের একটি পালক স্বয়ং কৃষ্ণ আভরণরূপে ব্যবহার করেন। সাপের সঙ্গে লড়াই করে তাকে পর্যুদস্ত করার ক্ষমতা রাখে ময়ূর। এই লক্ষণীয় ক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করে তুলনাটি করেছেন তুলসীদাস। তুলসী যে সকল উপমা ব্যবহার করেছেন, তা সহজ, সরল, চিত্তাকর্ষক। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, মহিলাগণ এবং কয়েকটি সম্প্রদায়কে নিয়ে তাঁর কিছু উপমা দ্বৈত অর্থ বহন করে। তবে মহান কবি বিনীতভাবে বলেছেন, “सुजन सुचित सुनि लेहु सुधारी” – “গুণীজন প্রয়োজনে তার কাজটি পরিশুদ্ধি (নূতন রূপে ব্যাখ্যা) করতে পারেন।”